
বিজ্ঞানের আশীর্বাদে আমাদের মুঠোয় চলে এসেছে গোটা পৃথিবী। কিন্তু এই আশীর্বাদটাই দিনে দিনে অভিশাপের রূপ নিচ্ছে, এবং তার জন্য অবশ্যই দায়ী আমরা নিজেরা। যতক্ষণ জেগে থাকা হয়,হাতে ফোন। বিনোদনের হাজার সম্ভার সাজানো এই ছোট্ট জিনিসটার দিকে তাকিয়ে কেটে যাচ্ছে বহু মুহুর্ত। ফলে শরীরে সৃষ্টি হচ্ছে বহু রোগ।
কথিত আছে, ‘শরীরের নাম মহাশয়,যা সওয়াবে, তাই সয়’।
কিন্তু তারও একটা সীমা থাকে। সীমা অতিক্রম করে গেলেই শুরু হয় সমস্যা,জন্ম নেয় রোগ।
আমাদের সময় যেমন বিনোদনের বস্তু ছিল টেলিভিশন, আজকালকার জেনারেশনের বিনোদনের বস্তু হলো ফোন। এবং তার জন্য অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দায়ী বাচ্চার বাবা মা। বাচ্চা কাঁদছে, ফোন নাও, বাচ্চা খাচ্ছে না, ফোন নাও, এরকম নানা বাহানা।ফলে বাচ্চার চোখ সর্ব্বক্ষণ মোবাইল স্ক্রিনে। একভাবে বসে থাকতে থাকতে কমে যাচ্ছে দৈহিক কার্যক্ষমতা, বাড়ছে নানা শারীরিক রোগ, সঙ্গে ফোন না দিলে বাড়ছে জেদ।

বাচ্চারা সবসময় সমস্যা হলেও বলে উঠতে পারে না। তাই দশ বছর অবদি বাবা মাকে খুব ভালো ভাবে খেয়াল রাখতে হবে বাচ্চার চোখে কোনরকম সমস্যা হচ্ছে কিনা। সেটা স্কুলে নিয়মিত যোগাযোগ রেখেই হোক, অথবা বাচ্চার গতিবিধির দিকে নজর রেখেই হোক।
মূল কথায় ফিরি। দীর্ঘ সময় ধরে, সাধারণত বেশীক্ষণ ফোন দেখলে যে সব সমস্যা বাচ্চাদের হয়, তা হলো :
স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলে চোখের ক্লান্তি (Strain), শুষ্কতা (Dryness), ঝাপসা দৃষ্টি (Blurred Vision), মাথাব্যথা (Headache), এমনকি ঘাড় ও কাঁধে ব্যথাও হতে পারে। ফোন থেকে নির্গত নীল আলো (Blue Rays) ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। এছাড়া, শিশুদের ক্ষেত্রে চোখের পাওয়ার কমে যাওয়া বা মায়োপিয়া (Myopia or Near Sightedness) অর্থাৎ দূরের জিনিস পরিস্কার দেখতে না পাওয়ার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম থেকে হওয়া চোখের সমস্যা :
১) শুষ্ক চোখ (Dryness) :
স্ক্রিন দেখার সময় চোখের পলক ফেলার পরিমাণ কমে যায়, ফলে চোখ শুষ্ক হয়ে যেতে পারে।
২) চোখের চাপ (Digital Eye Strain) :
একটানা স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকলে চোখের উপর চাপ পড়ে এবং ক্লান্তিভাব দেখা দেয়।
৩) ঝাপসা দৃষ্টি(Blurred Vision) :
চোখের পাওয়ার কমে গেলে বা চোখের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়লে ঝাপসা দৃষ্টির সমস্যা হতে পারে।
৪) মাথাব্যথা (Headache) :
খুব সাধারণ সমস্যা। অনেক বাচ্চার দেখা যায়।চোখের সমস্যা মাথাব্যথার কারণ হতে পারে।
৫) নীল আলো ( Blue Rays) :
ফোনের নীল আলো ঘুমের চক্রে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে,যা অনিদ্রা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

কী করতে হবে (What To Do) :
১) শিশুদের স্ক্রিন টাইম সীমিত করা উচিত। দুই বছরের কম বয়সীদের জন্য স্ক্রিন টাইম একদম না রাখাই ভালো। দুই থেকে পাঁচ বছর বয়সীদের জন্য দিনে এক ঘন্টার বেশি স্ক্রিন টাইম না দেয়াই উচিত।
২) স্ক্রিন দেখার সময় প্রতি ২০ মিনিট পর পর ২০ সেকেন্ডের জন্য ২০ ফুট দূরের কিছুর দিকে তাকিয়ে চোখের বিশ্রাম দেওয়া উচিত(২০-২০-২০ নিয়ম)।
৩) চোখ ঘষা বা চুলকানো থেকে বিরত থাকতে হবে।
৪) পর্যাপ্ত আলোতে বসে স্ক্রিন দেখতে হবে।অন্ধকারে ফোন দেখা যাবেনা।
৫) চোখের পলক ফেলতে হবে নিয়মিত।মোবাইল স্ক্রিনের উজ্জ্বলতা কমিয়ে রাখা অত্যন্ত জরুরী।চোখের আরামের জন্য মাঝে মাঝে বিশ্রাম নিতে হবে।
৬) চোখের পেশি শক্তিশালী করার জন্য কিছু চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে নিয়মিত চোখের ব্যায়াম করতে হবে।
৬) যদি চোখের কোনো সমস্যা দেখা যায়,তাহলে দ্রুত চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
বাচ্চাদের চোখে সুস্বাস্থ্য বজায় রাখতে কী কী খাওয়া উচিত :
ভিটামিন এ,সি,ই এই ভিটামিনগুলো বাচ্চাদের জন্য খুব প্রয়োজনীয়।বাচ্চাদের বেশি করে গাজর, যা কিনা বিটা ক্যারোটিন এ ভরপুর ও চোখের জন্য খুব উপকারী, কমলা রঙের ফল, সবুজ শাকসবজি,বাদাম,মিষ্টি আলু খাওয়ানো উচিত। সঙ্গে ছোট মাছ ও ডিম, যাতে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি আ্যাসিড থাকে, খাওয়াতে হবে যা চোখের জ্যোতি বাড়াতে সাহায্য করে।
শেষে একটা কথাই বলার, বাচ্চাদের সঙ্গে ফোন দেখা নিয়ে রাগারাগি বা জোরাজুরি করলে হবেনা। এতে ফল হবে বিপরীত।প্রত্যেকটা বাবা মায়ের প্রতি আমার বক্তব্য, বাচ্চাদের বেশী করে সময় দিন, ওদের সঙ্গে খেলুন, গল্প করুন।
বাচ্চা যখন ফোন দেখবে বলে বায়না করছে, ওর হাতে তুলে দিন রঙ-পেনসিল আর কাগজ। ওকে উৎসাহ দিন ছবি আঁকার।আপনিও অংশগ্ৰহণ করুন। দেখবেন, একটু পরেই বাচ্চা খুশী মনে ফোনের কথা ভুলে গিয়ে আঁকবে। বাচ্চাদের হাতে ফোনের বদলে তুলে দিন নানা ধরণের বই। এতে বাচ্চার জ্ঞানেরও বিকাশ ঘটবে, বাচ্চা ফোনের থেকে দূরে থাকবে।

ছবির মডেল : হৃদিমা । ছবি : বিয়াস ঘোষ
জীবনস্মৃতি আর্কাইভ ব্লগ
যুগ্ম সম্পাদক : অরিন্দম সাহা সরদার অবেক্ষক এবং সভাপতি, জীবনস্মৃতি আর্কাইভ ।
বিয়াস ঘোষ সম্পাদক, জীবনস্মৃতি আর্কাইভ ।
প্রধান সহযোগী সম্পাদক : মৌমিতা পাল
সহযোগী সম্পাদক মণ্ডলী : প্রমিতি রায় । অঙ্কুশ দাস । সুজাতা সাহা
প্রথম বর্ষ । প্রকাশ – ৩ । ৭ জুলাই ২০২৫