Jibansmriti Archive

বৃক্ষরোপণ – চিত্র – ১ । ছবি – বিয়াস ঘোষ

রবীন্দ্র-শিক্ষাদর্শে পরিচালিত  পাঠভবন ডানকুনির প্রতিষ্ঠা ১৯৯২ সালের ১০ই আগস্ট। প্রতিবছর এই দিনটিতে পালিত হয় বৃক্ষরোপণ ও বর্ষামঙ্গল উৎসব।

প্রকৃতির সঙ্গে মিলতে না পারলে শিক্ষা অসম্পূর্ণ থেকে যায়। তাই, বৃক্ষরোপণ ও বর্ষামঙ্গলের মতো অনুষ্ঠানের বিশেষ আয়োজন।

বৃক্ষরোপণ – চিত্র – ২ । ছবি – বিয়াস ঘোষ

শান্তিনিকেতনের বৃক্ষবিরল রুক্ষ প্রান্তরকে সবুজ করে তুলতে চেয়েছিলেন কবি। লিখেছিলেন ‘মরুবিজয়ের কেতন উড়াও শূন্যে  হে প্রবল প্রাণ’। রবীন্দ্রনাথ বৃক্ষরোপণকে শুধু আনুষ্ঠানিক আয়োজনে সীমাবদ্ধ রাখেননি, তাকে করে তুলেছিলেন শিক্ষার অঙ্গ।

বৃক্ষরোপণ – চিত্র – ৩ । ছবি – বিয়াস ঘোষ


পাঠভবন ডানকুনিও সেই ধারা বহন করে চলেছে জন্মলগ্ন থেকে। এখানেও শিক্ষা কেবল পুথির পাতায় আবদ্ধ নয়, বরং প্রকৃতির সঙ্গে শিশুমনের মিলনভূমি পাঠভবন। তাই, এখানে যে শিশুবৃক্ষ রোপিত হয় বন্দনাগানে, পরম যত্নে সে বেড়ে উঠতে পারে, যেমন করে এখানে বেড়ে ওঠে অজস্র কোমল শৈশব। বৃক্ষরোপণের পাশাপাশি হয় স্তোত্রপাঠ, পঞ্চভূতের প্রশস্তি ও মাঙ্গলিক মন্ত্রের উচ্চারণ।

বৃক্ষরোপণ – চিত্র – ৪ । ছবি – বিয়াস ঘোষ

বর্ষামঙ্গল, বৃক্ষরোপণ উৎসবেরই অঙ্গ। বৃক্ষরোপণ পর্বের পর অনুষ্ঠিত হয় এই বর্ষামঙ্গল। নাচ, গান, পাঠে বর্ষাবন্দনা করে ছাত্রছাত্রীরা। বর্ষাকে নানা রূপে দেখা, মানবমনের নানা অনুভূতির সঙ্গে মিলিয়ে তাকে উপলব্ধি করতে পারার কথা বলে বর্ষামঙ্গল।

বৃক্ষরোপণ – চিত্র – ৫ । ছবি – বিয়াস ঘোষ

এই অনুষ্ঠানের দীর্ঘ প্রস্তুতিপর্ব চলে। আসলে পাঠভবন এই অনুষ্ঠানগুলিকে পাঠক্রম থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেখে না। বরং, রবীন্দ্রভাবনার অনুসারী পাঠভবনের বিশ্বাস, এভাবেই শিশুর সার্বিক বিকাশ ঘটে। রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনা বলে, বাহুল্যের অভাব থাকলেই সৃজনশীলতার বিকাশ হয়।  তিনি চেয়েছিলেন শিশু শুধু তোতাপাখির মতো বাঁধাবুলি কণ্ঠস্থ করবে না, বরং শিখবে প্রকৃতির মধ্যে থেকে, পঞ্চ ইন্দ্রিয় দিয়ে। তাই, পুথির পাঠের পাশাপাশি নাচ, গান, চিত্রকলা ও বিবিধ শিল্পচর্চার আয়োজন করেন শান্তিনিকেতনে।


পাঠভবনেও বর্ষামঙ্গলের গান গাইতে গাইতে, পাঠ করতে করতে ছেলেমেয়েরা ওদের রবি ঠাকুরকে খুঁজে পায়, খুঁজে পায় নিজেদের। কখনো ওদের পরিচয় ঘটে কালিদাসের মেঘদূতের সঙ্গে, কখনো পদাবলীর চণ্ডীদাস-বিদ্যাপতির পদ উচ্চারিত হয়, কখনওবা ছিন্নপত্রের তরণীতে ওদের মন ভেসে যায় শিলাইদহ-পতিসরের পদ্মাবক্ষে। ওরা জানে, ভুবনডাঙায় অসহায় গ্রামবাসীদের জন্য জলাশয় সংস্কার কীভাবে হয়ে ওঠে বর্ষামঙ্গলের অঙ্গ।   ব্যক্তিগত জীবনের গণ্ডি অতিক্রম করে ওরা এভাবেই পায় বিশ্বগত হয়ে ওঠার পাঠ। ফলে, এই প্রস্তুতিপর্বও শিক্ষার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।

বৃক্ষরোপণ – চিত্র – ৬ । ছবি – বিয়াস ঘোষ

এছাড়াও সামগ্রিকভাবে এই অনুষ্ঠানগুলি গড়ে তোলে শিক্ষার্থীদের নান্দনিক বোধ। গানের ভিতর দিয়ে ওরা ভুবন দেখতে শেখে, নৃত্যের শৈলীবিন্যাসে নিজেদের সৃজনশীল ভাবনার প্রকাশ ঘটাতে পারে, পাঠ ও অভিনয়ের মধ্য দিয়ে চলে বহু চরিত্রের যাপন, নতুন শব্দ, ভাব ও ছন্দের সঙ্গে পরিচয়।

একদল ছেলেমেয়ে, তাদের দায়িত্ব থাকে ডালা, পালকি, ছাতা ও অন্যান্য সরঞ্জাম তৈরি। তারা এই প্রস্তুতিপর্ব চলার সময়েই অতি যত্নে বানিয়ে ফেলে সেসব। এও এক সৃজনশীলতারই চর্চা।

আর একদল, যারা দায়িত্ব নিয়ে অনুষ্ঠান পরিচালনায় সাহায্য করে। তারা স্বেচ্ছাসেবক। ছেলেমেয়েরা অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে এই দায়িত্ব বহন করে অনুষ্ঠানকে করে তোলে সর্বাঙ্গসুন্দর। জীবনে চলার পথে এই দায়িত্ব গ্রহণের পাঠ যেন এখান থেকেই শুরু করতে পারে ওরা, এমনটাই চায় পাঠভবন।

বর্ষামঙ্গল – চিত্র – ৮ । ছবি – বিয়াস ঘোষ

এভাবেই পাঠভবনে সহপাঠক্রম অঙ্গীভূত হয়ে যায় পাঠক্রমের সঙ্গে। প্রতিবছর পাঠভবনের জন্মদিন হয়ে ওঠে প্রকৃতির পাশাপাশি আমাদের মানসলোকের মরুবিজয়ের অঙ্গীকার।

বর্ষামঙ্গল – চিত্র – ৯ । ছবি – বিয়াস ঘোষ

উৎসব বিষয়ক একটি দৃশ্য-শ্রাব্য উপস্থাপনার লিংক : https://youtu.be/P_M81a-CGZ0

জীবনস্মৃতি আর্কাইভ ব্লগ

যুগ্ম সম্পাদক : অরিন্দম সাহা সরদার (অবেক্ষক এবং সভাপতি, জীবনস্মৃতি আর্কাইভ ) এবং বিয়াস ঘোষ (সম্পাদক, জীবনস্মৃতি আর্কাইভ)

প্রধান সহযোগী সম্পাদক : মৌমিতা পাল

সহযোগী সম্পাদক : অঙ্কুশ দাস

প্রথম বর্ষ । প্রকাশ – ৬ । ২৬ অগস্ট ২০২৫

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *