Jibansmriti Archive

আশীস মান্না (১৯৫২-১৯৮৯), পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার লাভপুরের এক বিরল প্রতিভাবান শিল্পী, যিনি নাট্যচর্চা ও চিত্রশিল্পে গভীর প্রভাব ফেলেছিলেন। মেদিনীপুরে জন্ম নিলেও তাঁর কর্মজীবনের বেশিরভাগ অংশ লাভপুরেই কেটেছে।
শিক্ষাজীবন সংক্ষিপ্ত হলেও, ছোটবেলা থেকেই তিনি ছবি আঁকা এবং শিল্পের প্রতি আগ্রহী ছিলেন। প্রথাগত শিক্ষার বাইরে এসে তিনি বিভিন্ন শিল্প মাধ্যমে, যেমন সাইনবোর্ড লেখা, চিত্রাঙ্কন, ভাস্কর্য এবং মূর্তি তৈরিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান। রঙের জন্য তিনি গাছপালা ও মাটির ব্যবহার করতেন।

১৯৭০ সালে তাঁর নেতৃত্বে গঠিত সপ্তর্ষি নাট্য ইউনিট লাভপুরে নাট্যচর্চায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। তিনিই প্রথম লাভপুরে টিকিটের বিনিময়ে অভিনয় এবং প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে আধুনিক প্রযোজনার প্রচলন করেন। ১৯৭৬ সালে তিনি প্রায় ৯ মাসের এক ভারত ভ্রমণে বের হন, যেখানে তিনি ছবি বিক্রি ও ম্যাজিক দেখিয়ে খরচ চালাতেন। এই ভ্রমণ তাঁর বোহেমিয়ান জীবনযাত্রাকে আরও উৎসাহিত করে।


১৯৭৮ সাল থেকে বিশ্বেশ্বরী শিশুশিক্ষা মন্দিরে অঙ্কন শিক্ষক হিসেবে কাজ করার সময়, তাঁর শিল্পকর্ম ও সাংগঠনিক দক্ষতা আরও বিকশিত হয়। ১৯৮৪ সালে তাঁর তৈরি ব্যতিক্রমী সরস্বতী মূর্তি এবং কলাভবনের শিল্পীদের নিয়ে প্রথম চিত্র প্রদর্শনী লাভপুরে বিশেষ সাড়া ফেলে। তাঁর অভিনীত শেষ নাটক ছিল অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নানা রঙের দিন’। ১৯৮৬ সালে তাঁর ছবি অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টসে প্রদর্শিত হয়।

১৯৮৭-৮৮ সাল নাগাদ তিনি সমাজের নিম্নবিত্ত ও অসামাজিক কার্যকলাপের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের নিয়ে ‘পথের ছেলে’ নামক একটি যাত্রাপালা তৈরি করেন, যা অনেককে মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। এই যাত্রায় চাকরের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পান।

রামকিঙ্কর বেজ, ভ্যানগগ, পিকাসো, ও সালভাদর দালির মতো শিল্পীরা তাঁকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছিলেন। জীবনের শেষ দিকে তিনি একাকীত্ব ও মানসিক অসুস্থতায় ভুগছিলেন। অবশেষে, ১৯৮৯ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর মাত্র ৩৭ বছর বয়সে লাভপুরে তিনি আত্মহত্যা করেন। আশীস মান্নার জীবন ও শিল্পকর্ম আজও এক গভীর গবেষণার বিষয়।

তথ্যসূত্র : আশীস মান্নার শেষ জীবনের ছায়াসঙ্গী কেদারনাথ আচার্য হতে প্রাপ্ত তথ্যানুসারে লিপিবদ্ধ।

অঙ্কুশ দাস আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক এবং প্রাবন্ধিক

জীবনস্মৃতি আর্কাইভ ব্লগ

যুগ্ম সম্পাদক অরিন্দম সাহা সরদার অবেক্ষক এবং সভাপতি, জীবনস্মৃতি আর্কাইভ । বিয়াস ঘোষ সম্পাদক, জীবনস্মৃতি আর্কাইভ ।

প্রধান সহযোগী সম্পাদক : মৌমিতা পাল

সহযোগী সম্পাদক মণ্ডলী : প্রমিতি রায় । অঙ্কুশ দাস । কুণাল গুপ্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *