রাহুল পুরকায়স্থ, আমার প্রিয় কবি। আমরা একটা কাজ যৌথ ভাবে করেছিলাম। নাম, ওই দিয়ে ছিলো— ‘ও তরঙ্গ লাফাও’। আমার কোলাজ, ওঁর কবিতা। এক সন্ধ্যায় প্রখর আড্ডা ও মদ্যপান শেষে, আবিষ্কার হলো একটা রঙিন খাতা, তার থেকেই জন্ম নিলো, ৩৬ টি কবিতা। যেমন —
‘পুনরায় দেখা হয় যদি!
যদি হয় দেখা!
আবার সঙ্গমে যাব
অস্থির সঙ্গমে
তুমি যাবে? যাবে তুমি?
মৃতশব্দ, মৃতবর্ণরেখা?’

রাহুল নাকি সেই রাতে, সারারাতে ওই ৩৬ টি কবিতা লিখেছিলো, আমার ৩৬ টি কোলাজ নিয়ে। আমি একটা বাঁধানো খাতায় এক এক করে বানিয়ে তুলছিলাম রঙিন ছেঁড়া কাগজের গল্পগাছা। আমার তেমন বলার কিছু কথা ছিলো না। আমি দৃশ্য ভাষা নিয়েই ব্যস্ত ছিলাম। সবটাই একটা ঘটে ওঠা দৃশ্যের পর দৃশ্য।
আমি যেন তার একমাত্র দর্শক। রাহুল যোগ দিলো এই দেখাতে। সে দেখলো, লিখলো কবিতার ভাষায়। আমি যেমন একটা ঘোরে কাজ করেছি, রাহুলও তেমনি ঘোরে লিখেছে।

রাহুল আমার দীর্ঘদিনের সহচর।
দৃশ্য সহচর। আমি বলি আমার নির্মাণ হয়েছে অপর দ্বারা। সেই অপরদের একজন রাহুল, অবশ্যই। তালি যেমন এক হাতে বাজে না, তেমন আমার দৃশ্য, আমার অভিব্যক্তি। দৃশ্যেরও প্রাণ আছে, আমি যেমন একজন সেই প্রাণের অংশীদার, তেমন রাহুলও একজন অংশীদার।

২০০৯ সালে আমি একটা কবিতা ও চিত্রের কথোপকথনে ঢুকে গিয়েছিলাম, নাম ছিল— ‘অক্ষর কখনো ঘুমোয় না’। তাতে ১৫ জন কবির মধ্যে রাহুল ছিলো। আমরা প্রায়দিন দূরভাষে কথা বলতাম। কবিতার কথা, ছবির কথা। সাধারণত রাহুলের উচ্চারণ ভয়ংকর জড়ানো ছিলো। দোভাষী লাগতো বুঝতে। কিন্তু যখন কবিতা পড়তো, তখন আমরা আশ্চর্য হয়ে দেখতাম, কী স্পষ্ট উচ্চারণ ওঁর। দৃপ্ত কন্ঠে পাঠ করতো। এমনিতেই কবির স্বকন্ঠে কবিতা শোনার অভিজ্ঞতা ভিন্ন ধরনের। উত্তেজনায় ভরপুর।
রাহুলের নানা ধরনের অস্তিত্ব সংকট ছিলো। একদিকে অর্থ-সংকট তার পাশে গভীর কাব্য-সংকট। ওঁর নানা কৃত্তিকলাপ চলতেই থাকতো, বিরামহীন। আমার সাথে ভাগ করে নিতো। প্রেমের সংকট ছিলো চরমে। এক পুত্র আছে নাম আশমান। বড় প্রিয় ছিলো ওঁর। বড়ো আকাশের মতো ওঁর মাথার উপর ঘিরে ছিলো। ও দুদণ্ড শান্তি পেতো ওঁর তলে।

জীবনস্মৃতি আর্কাইভ ব্লগ
যুগ্ম সম্পাদক : অরিন্দম সাহা সরদার (অবেক্ষক এবং সভাপতি, জীবনস্মৃতি আর্কাইভ ) এবং বিয়াস ঘোষ (সম্পাদক, জীবনস্মৃতি আর্কাইভ)
প্রধান সহযোগী সম্পাদক : মৌমিতা পাল
সহযোগী সম্পাদক : অঙ্কুশ দাস
বিশেষ প্রকাশ । ২৬ জুলাই ২০২৫