
উত্তর চীনে প্রবল ঠাণ্ডা, ওখানে দুধ খেলে পেটে খুব ব্যথা হতো বা খাবার ঠান্ডার জন্য পেটের রোগ খুব দেখা দিতো। ওখানে এক ধরনের পাতা পাওয়া যেত যার এখনকার জ্ঞানে নাম হলো Artemisia Vulgaris। সারা পৃথিবী পরে একে চিনেছে moxa পাতা হিসেবে। এই পাতা কে শুকিয়ে গুঁড়ো করে চুরুটের মতো করে জ্বালিয়ে পেটে সেঁক দিলে পেট ব্যথাসহ হজমের গন্ডগোল সেরে যেতো। Moxibustion -এর জন্ম এভাবে। পরবর্তীতে একে আকুপাংচার-এর সাথে যুক্ত করা হয়।

আকুপাংচার বিন্দুতে মক্সা সেঁক দেওয়া হয়। চীনে ছোটো সমস্ত বাচ্চা কে কয়েকটি বিশেষ বিন্দুতে Moxibustion করা হয় যাতে ঠান্ডা না লাগে এবং ভালো প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়। শুধু গরম নয়, এর কিছু ঔষধিগুন ও আছে। যেগুলো নিয়ে বিস্তৃত গবেষণা চলছে। আমাদের দেশেও হয়েছে। আমাদের ভারতবর্ষের হিমালয়ের পাদদেশে মক্সা-র অন্য একটি প্রজাতি পাওয়া যায়, যার বিজ্ঞানসন্মত নাম Artemisia annua। একজন মানুষ তাঁর নিজের চেষ্টা এবং জানার অপরিসীম আগ্রহের উপর ভর করে এক অনন্যসাধারণ হয়ে উঠতে পারেন তার উদাহরণ হলেন ডাঃ বিকাশকুমার চন্দ্র। মুর্শিদাবাদের সালারের মালিহাটি গ্রামে ১৯৪৮ সালে জানুয়ারি অথবা এপ্রিল মাসে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তরুণ বয়স থেকেই চরম বামপন্থায় আকৃষ্ট ছিলেন।
লেনিন, মার্ক্স, মাও সে তুঙ কে জানতে গিয়েই হয়তো আকুপাংচার ও Moxibustion-এর প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। হিমালয়ের পাদদেশে জন্মানো মক্সা গাছ চেনা, তার পাতা সংগ্রহ করা এবং তার থেকে মক্সা তৈরী করে রোগীদের উপর প্রয়োগ করা, এ এক সত্যই সাধারণের অসাধারণ হয়ে ওঠার গল্প-কথা। পরবর্তী কালে তিনি ‘Indian Research Institute for Integrated Medicine‘-এর সহায়তায় ‘Defense Research Development Organization’ (DRDO) একটি Moxibustion সংক্রান্ত গবেষণায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। মুর্শিদাবাদ তাঁর জন্মস্থান হলেও কর্মস্থল ছিল উত্তরবঙ্গের শিলিগুড়ি শহর। বিকাশকুমার চন্দ্র প্রচুর মানুষকে তাঁর নিজের প্রচেষ্টায় আকুপাংচার ও Moxibustion চিকিৎসায় সুস্থতা প্রদান করেছেন । তাই তিনি প্রকৃত অর্থেই ‘The Father of Indian Moxa’।

বর্তমান বছরে অর্থাৎ ২০২৫ সালের ১০ জানুয়ারি মক্সাম্যান তাঁর একমাত্র কন্যা ও স্ত্রী কে রেখে অমৃতলোকে পাড়ি দিয়েছেন। তিনি আকুপাংচার এসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া-র আজন্ম সদস্য ছিলেন। নিজের প্রচেষ্টায় জনসাধারণের মধ্যে এই চিকিৎসার প্রচার প্রসার করে গিয়েছেন জীবনভর। ভারতবর্ষের আকুপাংচার-জগৎ তাঁর এই অনন্য অবদান কে চিরকাল স্মরণে রাখবে। আমরা তাঁর কাছে চিরকৃতজ্ঞ থাকব।

পিনাকী চক্রবর্তী । অকুপাংচার চিকিৎসক
জীবনস্মৃতি আর্কাইভ ব্লগ
যুগ্ম সম্পাদক : অরিন্দম সাহা সরদার (অবেক্ষক এবং সভাপতি, জীবনস্মৃতি আর্কাইভ ) এবং বিয়াস ঘোষ (সম্পাদক, জীবনস্মৃতি আর্কাইভ)
প্রধান সহযোগী সম্পাদক : মৌমিতা পাল
সহযোগী সম্পাদক : অঙ্কুশ দাস
প্রথম বর্ষ । প্রকাশ – ৪ । ২৪ জুলাই ২০২৫
বিনম্র শ্রদ্ধা ও প্রনাম। আজ ডঃ বিকাশ কুমার চন্দ্র আমাদের মধ্যে নেই কিন্তু উনি আছেন আমাদের হৃদয়ে। ভারতে আকুপাংচার চিকিৎসার পসার যত বাড়বে তত বেশি উনার নাম বার বার উচ্চারিত হবে মক্সিবাসন চিকিৎসার ক্ষেত্রে উনার অসামান্য অবদানের জন্য। মক্সা পাতা সংগ্রহ, তার গুনমান নির্ধারণ, সংরক্ষণ এবং শেষে চিকিৎসার উপযোগী করে তোলা এই পুরো কাজটাই উনি করে গেছেন কঠোর পরিশ্রম এবং অধ্যবসায়ের মাধ্যমে যা আগামী দিনে আকুপাংচার চিকিৎসার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ অবদান। ইরিমে থাকাকালীন খুব অল্প সময়ের জন্য হলেও উনার সানিধ্য লাভ করেছি এবং শুনেছি মক্সিবাসন বিষয়ে উনার গভীর জ্ঞান যা প্রতি মুহূর্তে চিকিৎসা এবং এ ছাড়াও অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে খুবই কাজে লাগে। উনি যেখানেই থাকুন শান্তিতে থাকুন।