Jibansmriti Archive

কবি লিখেছেন বসন্ত আগমনের কথা। তখন ফুল ফুটুক বা না ফুটুক। আমি লিখছি সেই  মহামারীর কথা। দশ পর্বে।  আমাদের  জীবৎকালে দেখা  সেরা ঘটনা বা দুর্ঘটনার একটি। কিন্ত  সেই মহামারী কে অন্য  চোখ  দিয়ে দেখা। অন্য  কান দিয়ে শোনা। সে সময় কিছুই  করার না সুযোগ পেয়ে  মাঝেমধ্যেই  দিনলিপি লিখেছি।  আর সেই দিনলিপি ভয় দেখানোর কথা নিয়ে  অবশ্যই নয়। বরং সাহস জুগিয়ে। যেন  রুটির অন্য  পিঠ। সেই দুঃসময়ে  আমার  নজরে আসে নানাবিধ স্বপ্ন আর সবুজের কথা। একা মানুষের রঙিন দিনের কথা,যখন  বিষাদ একেবারেই দে- ছুট।  তখন স্মৃতি বিস্মৃতির অতল জলের  আহ্বান  যেন। আর ফেলে আসা জীবনের  গভীরে থাকা  দুটো একটা  সবুজ  নুড়ি পাথর তুলে আনা ।

      আবার  যখন  সেই কুটিল চোখ মটকানো চাউনি একটু আধটু  “ওই দেখা যায়” বলে  কেউ কেউ  সরব হচ্ছে, তখন  এই দিনলিপি  আমাদের কিছু পজিটিভ ভাবনা ভাবতে সাহায্য  করবে, এই আশা থাকলো।

এক

এই-যে কালো মাটির বাসা

এখন মনে পড়ে ,আর মনেই  শুধু পড়ে। মনে পড়ারই দিন যে  এখন। একা চুপ করে বসে  থাকি। একেবারে একা থাকার  সময় । কিছুদিন আগেই চোখের অস্ত্রোপচার হয়েছিল। দশদিন চোখে কালো চশমা সহ গৃহে  এমনিতেই ছিল এক বন্দী দশা। তা  মিশে গেল আবারও এক বন্দী দশায়। যেভাবে এবারের  চৈত্র, মিশেছে  সেদিন বৈশাখে।

আমাদের গ্রামের বাড়িতে সময় দেখার ঘড়ি ছিল না। তাতে কী হয়েছে। কালো গরুর এক গ্লাস দুধ খেয়ে  একটি সাদা গোঁফ হতো। দু মাইল হেঁটে এবং খালি পায়ে যেতে হতো ইস্কুল। সময় হাতে নিয়ে প্রায়দিনই দৌড়োতে হতো। কিন্তু সময়কে ধরবো কীভাবে ? সোনা রং এর রোদ উঠতো সকাল বেলায়। খড়ের ছাউনির এক চালার মাটির  তৈরি পড়ার ঘরে দাওয়ায়  পড়ত  তার একটা ছায়া। সাড়ে নটার ছায়াটায় খড়ি  দিয়ে মাটিতে দাগ দেওয়া থাকতো। অর্থাৎ  তখনই উঠে পড়তে হবে পড়া থেকে। পুকুরে ঝাঁপিয়ে বড় একখানা ডুব, তারপর নাকে মুখে কিছু  গুঁজে  দিয়ে  চলো ইস্কুল।

আহা, এই  দুঃসময়ে সব ফিরে আসছে একে একে। নীল আকাশ, এমনকি শহুরে এই  ছোটো বারান্দায়  বসে  গাছের ডালে  কত  রকম পাখি  দেখা। যেন বসে আছি কোনো এক বনবাঙলোর অতিথি নিবাসে। গতকাল পূর্ণিমা ছিল, কতদিন পর ছাদে উঠে থৈ থৈ জ্যোৎস্নার অপরূপ দেখেছি। সব ফিরে এসেছে।

আমাদের সেই যে  কালো মাটির  বাড়ির ছায়া। রোদ্দুর  ধীরে ধীরে সময়ের সঙ্গে পিছিয়ে যাচ্ছে,  ছায়া ক্রমে বাড়ছে। আমার মাতামহী কেটে দিয়েছে খড়ির দাগ। উঠে পড়ো । চলো এবার  ইস্কুল। ঘণ্টা পড়ে যাবে যে!

ক্রমশঃ

প্রশান্ত  মাজী  গদ্যকার এবং প্রতিবিম্ব পত্রিকার সম্পাদক

জীবনস্মৃতি আর্কাইভ ব্লগ

যুগ্ম সম্পাদক : অরিন্দম সাহা সরদার অবেক্ষক এবং সভাপতি, জীবনস্মৃতি আর্কাইভ । বিয়াস ঘোষ সম্পাদক, জীবনস্মৃতি আর্কাইভ ।

প্রধান সহযোগী সম্পাদক : মৌমিতা পাল

সহযোগী সম্পাদক মণ্ডলী : প্রমিতি রায় । অঙ্কুশ দাস । কুণাল গুপ্ত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *