Jibansmriti Archive

আমাদের যখন কম বয়স, অর্থাৎ ১০-১৫ বছরের মতন, ধরুন ১৯৫০-এর দশক,
তখন গ্রামে-গঞ্জে গেলে দেখেছি পরিবেশ খাঁ-খাঁ করছে, গাছপালা নেই, ফলের গাছ,
ফুলের গাছ, নেই। ওই সময়ে গ্রামে যাবার মাঝে-মাঝেই সুযোগ হত। আমার বাবা
কৃষিবিজ্ঞানী ছিলেন, উনি সরকারি কৃষিবিজ্ঞান দপ্তরের তরফে গ্রামের ফার্মগুলি পরিদর্শন
করতেন। গ্রামের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবার জন্য আমাদেরও কখনও সঙ্গে নিয়ে যেতেন।

আজ যখন রবীন্দ্রনাথের লেখা পড়ি তখন বুঝি যে গ্রামে নাকি আগে অনেক বৃক্ষ ছিল।
কিন্তু ক্রমে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছিল। ১৯২৮ সনে যখন পরিবেশ বা প্রকৃতির বিষয়ে চিন্তিত
হয়ে রবীন্দ্রনাথ দুটি উৎসবের সৃষ্টি করলেন – শান্তিনিকেতনে ‘বৃক্ষরোপণ’ এবং
শ্রীনিকেতনে ‘হলকর্ষণ’, তখন হলকর্ষণের অভিভাষণে বলেন,

‘পৃথিবীর দান গ্রহণ করবার সময় লোভ বেড়ে উঠলো মানুষের। অরণ্যের হাত থেকে
কৃষিক্ষেত্রের একাধিপত্য অরণ্যকে হটিয়ে দিতে লাগলো। নানা প্রয়োজনে গাছ কেটে-কেটে
পৃথিবীর ছায়াবস্ত্র হরণ করে, তাকে, দিতে লাগল, নগ্ন করে। তাতে তার বাতাসকে করতে
লাগল উত্তপ্ত, মাটির উর্বরতার ভাণ্ডার দিতে লাগল নিঃস্ব করে। অরণ্যের আশ্রয়হারা আর্যাবর্ত
আজ তাই খর-সূর্যতাপে দুঃসহ। এই কথা মনে রেখে কিছুদিন পূর্বে আমরা যে অনুষ্ঠান
করেছিলাম সে হচ্ছে বৃক্ষরোপণ। অপব্যয়ী সন্তান-কতৃক-লুন্ঠিত-মাতৃভাণ্ডার পূরণ করবার কল্যাণ উৎসব।’

১৯৩৮ সনে, ‘হলকর্ষণ’ ও ‘বৃক্ষরোপণ’ উৎসবের ভাষণে, আবার মানুষের লোভের কথা
তোলেন রবীন্দ্রনাথ।

‘মানুষ গৃধ্‌নু ভাবে প্রকৃতির দানকে গ্রহণ করেছে, প্রকৃতির সহজ দানে তার কুলোয়নি। তাই সে
নির্মম ভাবে বনকে নির্মূল করেছে। তার ফলে আবার-মরুভূমিকে ফিরিয়ে আনবার উদ্যোগ হয়েছে,
বিনাশ অগ্রসর হয়ে এসেছে – এক সময়, এর এমন দশা ছিল না। যেখানে ছিল অরণ্য, সে পৃথিবীকে
রক্ষা করেছে, ধ্বংসের হাত থেকে তার ফলমূল খেয়ে মানুষ বেঁচেছে। সেই অরণ্য বিপন্ন হওয়ায় এখন
বিপদ আসন্ন। সেই বিপদ থেকে রক্ষা পেতে হলে আবার আমাদের আহ্বান করতে হবে, সেই বনলক্ষ্মীকে।
আবার তিনি রক্ষা করুণ এই ভূমিকে, দিন তাঁর ফল, দিন তাঁর ছায়া।’

সেই উপলক্ষ্যে কবি যে গানটি লেখেন, তা হলো,

‘মরুবিজয়ের কেতন উড়াও শুন্যে – হে প্রবল প্রাণ।

ধুলিরে ধন্য করো করুণার পূণ্যে – হে কোমল প্রাণ।’

গানের লিঙ্ক : https://youtu.be/0jBh3ksWyPg?si=doiE7mbwuIOu_Rzf

অভিভাষণ : ইতিহাসবিদ ও প্রখ্যাত রবীন্দ্রজীবনীকার ড. উমা দাশগুপ্ত

জীবনস্মৃতি আর্কাইভের দশ বছর পূর্তি জন্মদিবস উপলক্ষ্যে উত্তরপাড়া জীবনস্মৃতি-কক্ষে।

২৪ বৈশাখ বৃহস্পতিবার ১৪৩২ (৮ মে ২০২৫) 

4 Responses

  1. রবীন্দ্রনাথের এসব কথা তো কখনো মুছে যাবার নয়, বড় ভাবনার সবটুকুই নিতে পারলে যেন ভালো হয়, এই যেন এখনকার আমার মনোভাব হয়েছে, জানি না তার বিস্তার কতটা পাবো। তবে আপনার শুরুর গল্পটা সেদিন কিছুটা শুনেছি, এসব পুরোটা নিতে পারলে, দখল করতে পারলে, তার থেকে বেশি আনন্দ আর কিছুই হবে না। অনেক ধন্যবাদ।

    1. অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই। আর্কাইভের পাশে থাকবেন। আপনার বন্ধুদের শেয়ার করবেন আমাদের ওয়েবসাইট লিঙ্ক : jibansmritiarchive.com

  2. কী সুন্দর চিত্র তুলে ধরেছেন প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ্ !
    গানের লিঙ্কও দিয়ে দিয়েছেন ।

    1. অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই। আর্কাইভের পাশে থাকবেন। আপনার বন্ধুদের শেয়ার করবেন আমাদের ওয়েবসাইট লিঙ্ক : jibansmritiarchive.com

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *